শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:২৩ অপরাহ্ন

সাংবাদিক প্রতি মুহুর্তে, প্রতিদিনই ঝুঁকির মধ্যে থাকে

সাংবাদিক প্রতি মুহুর্তে, প্রতিদিনই ঝুঁকির মধ্যে থাকে

১৬ বছর ধরে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করছি । আমি বিডি২৪লাইভ.কমের বিশেষ প্রতিনিধি ও দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকায় প্রধান সম্পাদক হিসাবে কর্মরত আছি । ঢাকার তুলনায় মফস্বলের সাংবাদিকতা আমার কাছে বেশ ঝুঁকিপূর্ণ বলেই মনে হয়।

যেমন কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশের ক্রসফায়ার বাণিজ্য ও নানা অপকর্মের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করাই কাল হয়েছে স্থানীয় সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফার । অমানুষিক নির্যাতন ও বর্বরতা চালানো হয় ফরিদ ও তার পরিবার-পরিজনের ওপর।

মিথ্যা মামলার বোঝা নিয়ে দীর্ঘ এক বছর ধরে জেলের ঘানি টেনেছেন সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খান। আর অসহায়ভাবে খেয়ে না খেয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছেন তার তিন সন্তান, স্ত্রী ও অবিবাহিত দুই বোনসহ বৃদ্ধ মা। আজও সাজানো মামলা প্রত্যাহার করেনি ।

ময়মনসিংহে একটি চক্রের ইন্ধনে আমার বিরুদ্ধেও দায়ের করেছিল একডজন সাজানো মামলা । ১১ টি মামলা থেকে বিজ্ঞ আদালত খালাস দিয়েছেন। এখনও বিচারাধীন আছে একটি মামলা । হয়রানির শেষ নেই আমার জীবনের কাহিনীও ।

সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খান ও আমি এক বছরের মত কারাগারে ছিলাম। যে মামলাগুলো ছিল মিথ্যা ও সাজানো। আমাদের মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে সারা দেশের সাংবাদিকরা আন্দোলনেও নেমেছিল। আমার সহকর্মীদের কথা আজও বলিনি, তারাই আমার প্রকৃত ভাই – বোন।

মফস্বলের প্রত্যেকটা সাংবাদিক পরিচিত। সবাই সবাইকে চেনে। ওখানে কোন সংবাদ হলে তাকে টার্গেট করা সহজ। ঢাকায় সেটা সম্ভব না। মফস্বলের সাংবাদিক প্রতি মুহুর্তে, প্রতিদিনই ঝুঁকির মধ্যে থাকে।

চোরাকারবারি, মাদক ব্যবসায়ী, প্রশাসন এবং ক্ষমতাসীন রাজনীতিবিদরা বিভিন্ন সময় মফস্বল সাংবাদিকদের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠে।
কিছু বড় পত্রিকা আছে যারা সাংবাদিকরা সমস্যায় পড়লে পত্রিকা কর্তৃপক্ষ দেখে। মামলায় পড়লে কর্তৃপক্ষ সেটা দেখে এবং সহযোগিতা করে। কিন্তু আমরা দেখেছি অধিকাংশ পত্রিকা কোন সহযোগিতা করেনা।

জেলা পর্যায়ে যেসব সাংবাদিকরা কাজ করছেন, তাদের অনেকেরই প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে কোন নিয়োগপত্র নেই । অভিযোগ রয়েছে, অধিকাংশ সংবাদমাধ্যম জেলা প্রতিনিধিদের কোনও মাসিক বেতন দেয় না। অনেক জায়গায় রাজনৈতিক মতাদর্শকে কেন্দ্র করে সাংবাদিকদের মাঝেও রয়েছে তীব্র বিভেদ।

মফস্বল সাংবাদিকদের এসব কারণে অনেক সাংবাদিক সাংবাদিকতার বাইরেও অন্য ক্ষেত্রে নিজেদের জড়িয়ে ফেলছে। ফলে তার কাজের ঝুঁকিও বাড়ছে। অনলাইন গনমাধ্যমের অধিকার নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ অনলাইন সংবাদপত্র সম্পাদক পরিষদ (বনেক)। এই যদি পরিস্থিতি হয় তাহলে সাংবাদিকদের সংগঠনগুলো অধিকার রক্ষায় কতটা কাজ করতে পারছে?

নানা ‘সীমাবদ্ধতা’ সত্ত্বেও সাংবাদিক ইউনিয়নগুলো সবসময় নির্যাতিত সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়িয়েছে।
অনেক ক্ষেত্রে নিয়োগপত্র এবং মাসিক বেতনের নিশ্চয়তা না থাকলেও খবর পাঠানোর চাপ ঠিকই থাকছে মফস্বল সাংবাদিকদের উপর। ফলে খবরের পেছনে যখন সাংবাদিক ছুটছেন তখন অনেক সময় নিজের নিরাপত্তার দিকে নজর দেবার সুযোগ থাকে না তাদের। পরিস্থিতি মোকাবেলার কোন প্রশিক্ষণও নেই তাদের।

যেসব জায়গায় বা পরিস্থিতিতে সাংবাদিকরা সহিংসতা কিংবা অন্যকোন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়তে পারেন, সেসব জায়গায় সাংবাদিকদের নিজস্ব কিছু প্রস্তুতি থাকা উচিত। আমাদের একজন স্থানীয় সাংবাদিক হয়তো লেখার প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন, কিন্তু পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবেলা করতে হবে এবং কীভাবে ঝুঁকি এড়িয়ে চলতে হবে, সে প্রশিক্ষণ তার নেই। গত এক দশকে বাংলাদেশে টেলিভিশন, পত্রিকা এবং অনলাইনের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বাড়লেও মফস্বল সাংবাদিকদের স্বার্থ উপেক্ষিতই রয়ে গেছে। শীঘ্রই পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন হবে – এমন আশাও করেছন না মফস্বল সাংবাদিকরা।

লেখক :
নাগরিক সাংবাদিক
মোঃ খায়রুল আলম রফিক
প্রধান সম্পাদক, দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |